এম এ হালিম শ্যামনগরঃ
আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০১ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলনের মাধ্যমে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এই দিনটি সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর,তবে পালিত হচ্ছেনা আজ
সুন্দরবন উপকুলবাসীর এক রক্ষাকবচের নাম। আমাজনকে যদি বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস তাহলে সুন্দরবনকে অবশ্যয় বলা উচিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আহার দাতা। সুন্দরবনের কোল ঘেষে বসবাসরত মানুষ সবাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল।
সুন্দরবনের উপর মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী নির্ভরশীল। এখানে বসবাস করে পৃথিবীর বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তবে প্রতিবছর প্রাকৃতিক ও মানুষ্য কারণে বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।
প্রতিবছর সুন্দরবনের উপর ছোট বড়ো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। সুন্দরবনকে মায়ের সঙ্গে উপমা দেওয়া যায়। মা যেমন সকল প্রতিকূল মুহূর্তে তার সন্তানকে মরম মমতায় আগলে রাখে। ঠিক তেমনি ভাবে ‘মা’ সুন্দরবন সুন্দরবন তার সন্তান উপকূল বাসীদেরকে সকল প্রতিকূলতা সহ্যকরে বুকে জড়িয়ে রক্ষা করে।
তারপরেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের যে আঁচ টুকু উপকূলের মানুষের উপর পড়ে সেটার প্রভাব উপকূলের জনজীবনকে টালমাটাল করে ফেলে।
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে প্রতিবছর সুন্দরবন উপকূলের মানুষ হারাচ্ছে তাদের সম্পদ। পরিবর্তন করছে তাদের জীবিকার মাধ্যম। গ্রাম থেকে স্থায়ী ও অস্থায়ী ভাবে স্থান্তরিত হয়ে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমাচ্ছে শহরে। ফলে শহর এলাকায় যেমনি বাড়ছে অতিরিক্ত মানুষের ঢল, তেমনি বাড়ছে বস্তির সংখ্যা। যেটার ফলে শহরে বৃদ্ধি পাচ্ছে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো বিভিন্ন অস্থিরতা। অপর দিকে সুন্দরবন এলাকার মানুষ হারাচ্ছে তাদের চিরাচরিত সংস্কৃতি।
সল্পমেয়াদী ভাবে স্থান্তারিত ব্যক্তিরা যখন শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসে তখন তারা গ্রামীণ সংস্কৃতি ও শহুরে সংস্কৃতির মধ্যে একটা মিশ্রণ ঘটে। এর ফলে গ্রামীণ সমাজ কাঠামোতে ইতিবাচক পরিবর্তনের চেয়ে নেতিবাচক পরিবর্তন বেশী হচ্ছে। ফলে উপকূলের মানুষের মধ্যে যেমন বাড়ছে অপরাধ, তেমনিভাবে ঘটতে তাদের মধ্যে নৈতিক স্খলন।
অপরদিকে মা সুন্দরবনকে একদল অসাধু শ্রেনী তীলে তীলে ধ্বংস করে দিচ্ছে বিভিন্ন অসদ উপায় অবলম্বন করে। যেমন চুরি করে কাঠ কেটে, বিষ দিয়ে মাছ ধরে, বিভিন্ন বন্যপ্রাণী হরিণ, কুমির ইত্যাদি অসাধু উপায়ে স্বীকার করে। তবে আশার কথা হলো প্রশাসনের সরব তৎপরতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এগুলো অনেকটা নির্মুল করা গেলেও পুরপুরি নির্মুল করা সম্ভব হয়নি। মানুষ্য সৃষ্টি কারণ ও প্রকৃতিক বিপর্যয়ের সংমিশ্রণে মা সুন্দরবনে ঘটছে একটা পরিবেশ ও প্রতিবেশগত বিপর্যয়। যেটার প্রভাব সুদুরপ্রসারি ও অপূরণীয়।
তাই আজ সুন্দরবন দিবস ও ভালোবাসা দিবসে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা ও ‘মা’ সুন্দরবন রক্ষার লক্ষ্যে আমারা সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
Leave a Reply